মোঃ আতাউর রহমান, যিনি শিবগঞ্জের একজন ময়লা সংগ্রাহক, কাজ করেন পৌরসভায়। পূর্বে তিনি ময়লা পরিস্কার করার জন্য একবেলা কাজ করতেন, এখন শিবগঞ্জে মিউনিসিপ্যাল সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট (এমএসডব্লিউএম) এর উদ্যোগের ফলে তিনি পৌরসভা ও স্থানীয় অঞ্চলে ময়লা পরিস্কার করতে গিয়ে দুই বেলা কাজ করেন। পৌরসভাগুলি পরিবার এবং স্থানীয় অঞ্চলে ময়লা ব্যবস্থাপনা, এগুলো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, নিরাপদ জায়গায় ফেলে দেয়ার দায়িত্ব পালন করে। বাংলাদেশে কার্যকর ভাবে ময়লা পরিস্কার পরিচ্ছন করতে জ্ঞান, ক্ষমতা এবং সম্পদের অভাব রয়েছে। যা সামাজিক ও পরিবেশগত এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিতে পারে মানুষের জীবনযাত্রা!
শিবগঞ্জের মূল অবকাঠামো কৃষি কাজকে কেন্দ্র করে, যদিও এখানকার পৌরসভায় তুলনামূলক মানুষের সংখ্যা বেশি নয়, তবে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সুবিধা ও আধুনিক অবকাঠামোর যথেষ্ট অভাব রয়েছে। সামাজিক, পরিবেশগত, এবং অর্থনৈতিক বর্তমান অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ৫ নং ওয়ার্ডে একটি এমএসডব্লিউএম ডিজাইন করার জন্য প্রবৃদ্ধি শিবগঞ্জ পৌরসভার সংগে যুক্ত হয়ে কাজ করেছে।
এই উদ্যোগের ফলে, উন্নত নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, উন্নত পরিবেশের গুণমান দেখা যাচ্ছে, যা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাস্তার দিকে পরিচালিত করেছে, যা লোকালয়ের মাধ্যমে সুন্দর করে স্বাগত জানানো হয়েছে। শিবগঞ্জের নাগরিকরা বলেছেন যে তারা মূলত পরিস্কার পরিবেশ, কম নোংরা ও গৃহপালিত পশুর ময়লা পরিস্কার করার সহজ উপায়ের কারনে বেশ লাভবান হচ্ছেন।
মূলত এই উদ্যোগ লাভবান করেছে সবাইকে। কারন এর মাধ্যমে যেমন বেড়েছে কর্মসংস্থানের সুযোগ, তেমনই বৃদ্ধি পেয়েছে তাদের আয়। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে আতাউর বলেন, আগে আমাদের অতিরিক্ত আয় হতো ২৩০ টাকা এবং আমরা ওভার টাইম করার সুযোগ পেতাম একবার, তবে প্রবৃদ্ধির কল্যানে এখন আমরা দুই শিফটে কাজ করি, যার কারনে ৪৭২ টাকা আয় করি। এর মাধ্যমে আমরা প্রতি মাসে ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ পাই।
আতাউর আরও বলেছেন যে এসব আবর্জনা ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাবেক কর্মচারীদের প্রাথমিকভাবে দুটি শিফটে কাজ করার জন্য পুনরায় র্নিযুক্ত করা হয়েছিল। প্রথম শিফটের সময়, তারা শিবগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় কাজ করে, আর দ্বিতীয় শিফটের সময়, তারা প্রধানত মডেলের দেখাশোনা ও পরিচালনার দিকে মনোনিবেশ করে।
আর এই কারনেই এখন তারা বেশি আয়ের সুযোগ পেয়েছে্, এখন আর তাদের এক শিফটে বসে থাকতে হয়না, এখন তারা দুই শিফটে আয়ের সুযোগ পেয়েছে, যা তাদের স্বাবলম্বী করতে সাহায্য করেছে। যা তাদের জীবনযাত্রার মান আরও বেশি উন্নত করেছে। – যোগ করেন আতাউর।
উল্লেখযোগ্যভাবে, পদ্ধতিগত আবর্জনা ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নে পৌরসভা লজিস্টিক চ্যালেঞ্জ ও জনবল এখন ঘাটতির মুখোমুখি। মডেল শিবগঞ্জ পৌরসভার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত ৪০ জন কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছে। যার ফলে, ৪০ জন এমএসডব্লিউএম কর্মী ( এর মধ্যে ৪৫% মহিলা) অতিরিক্ত কাজ করেছে ১৯২০ দিন। আর এর ফলে তারা অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করতে পেরেছে বাংলাদেশী মুদ্রায় ৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
আবর্জনা সংগ্রহকারীদের কাজের ধরণ ও মান বৃদ্ধির জন্য, এমএসডব্লিউএম একটি উদ্যোগ নেয়, যেখানে শহরে বুট, হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক এবং যন্ত্রপাতির যথাযথ ব্যবহার সহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ পরিচালনার উপর জোর দেয়া হয়। উপরন্তু, আবর্জনা সংগ্রহকারীদের জন্য প্রতি মাসেই একটি রিফ্রেশার প্রশিক্ষণ সেশন থাকে, যা তাদের এই বিষয়ে যথেষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান প্রদান করে।
অধিকন্তু, উদ্যোগটি পৌরসভাকে এমএসডব্লিউএম-এর জন্য একটি খরচ-পুনরুদ্ধার মডেল প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেছে। পৌরসভা এসব আবর্জনা ব্যবস্থাপনা সেবার বিনিময়ে প্রতিটি পরিবারের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে আসছে। এই প্রতিবেদন টি লেখার সময়কালে, পৌরসভা স্থানীয় পরিবারগুলোর কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থের মাধ্যমে এই মডেলটি চালানোর খরচ উঠিয়ে ফেলতে সামর্থ্য হয়, যার যার পরিমাণ মোট ৯৮ হাজার ৫০০ টাকা।
মডেলটির মাধ্যমে, পৌরসভা 5 নং ওয়ার্ড থেকে প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে নয় টন নন-বায়োডিগ্রেডেবল আবর্জনা আলাদা করে, যার মূল্য ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা। এ থেকে একটা ধারণা পাওয়া যায়, যদি মডেলটি পৌরসভার অন্য সব ওয়ার্ডে কার্যকর করা হয় এবং আবর্জনা বাজারজাত করা হয়, তাহলে এখান থেকে বছরে অতিরিক্ত ৭.২ মিলিয়ন টাকা বা ৭২ লাখ টাকা আয়ের সম্ভবনা রয়েছে। প্রবৃদ্ধির আনুমানিক জরিপ টা এরকমই।