উম্মে হানিমা একজন ৭ মাস বয়সী শিশুর মা, যিনি বসবাস করেন ভৈরব পৌরসভার গৌরীপুরের দক্ষিণ পাড়ায়। তিনি তার শ্বশুরবাড়ি থাকেন, যেখানে মোট সদস্য সংখ্যা ৮ জন। হানিমার স্বামী একজন কাতার প্রবাসী, স্বামীর অনুপস্থিতিতে তিনি এখন তার পরিবারের প্রধান কর্তা।
হানিমা বলেন, “যেহেতু আমার স্বামী বিদেশে থাকেন, তাই পৌরসভার সেবা নিয়মিত পাওয়ার জন্য আমাকে দায়িত্ব নেয়া লাগবে। অবশ্য মহিলা ও পুরুষ উভয়ের লাইন লম্বা হওয়ার কারনে সেবা পাওয়ার জন্য অনেক সময় লাগে। ছয় মাস আগে, আমি আমার নবজাতকের জন্ম প্রশংসাপত্রের জন্য পৌরসভায় গিয়েছিলাম। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও আমার ছোট্ট এই শিশুকে নিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। সেখানে আমি কোন বসার জায়গা পাইনি, এমনকি আমার বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর মত জায়গা খুজে পাইনি। অতিরিক্ত গরমে আমরা দুজনেই ক্লান্ত হয়ে যাই এবং এতে অসুস্থ হয়ে পড়তে হয় আমাদেরকে।
ভৈরব পৌরসভায় এগুলো খুব সাধারণ ও নিয়মিত দৃশ্য। যেখানে প্রতিদিন অন্তত ৬০০ থেকে ৭০০ মানুষ আসেন ১৪ রকমের নাগরিক সেবা গ্রহণ করার জন্য।
মূলত ঢাকা বিভাগের ব্যবসায়িক কেন্দ্র হচ্ছে ভৈরব পৌরসভা, যার ফলে অন্যান্য পৌরসভার তুলনায় এই পৌরসভা বেশি মানুষ কে সেবা প্রদান করে। নিয়মিত এখানে বেশ ভালো সংখ্যার মহিলারা আসেন সেবা নেয়ার জন্য, অন্তত ২০০-৩০০ মানুষ মুল পৌরসভা ভবনে যায় সেবা নিতে এবং ৪০০-৫০০ মানুষ মাতৃ সদন সুবিধা নেয়ার জন্য এখানে আসে। নারী সেবা গ্রহণকারীদের বৈচিত্র্যময় জনসংখ্যার মধ্যে রয়েছে বয়স্ক ব্যক্তিরা, যাদের শিশু রয়েছে এবং স্তন্যপান করানো মায়েদের অন্তর্ভুক্ত,”। এরকম টা জানিয়েছেন ভৈরব পৌরসভার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা (পিএনও) মোঃ ফারুক।
এই মহিলারা যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয় সেসব নিয়ে কথা বলার সময়, পিএনও বলেছিলেন, “তারা ওয়েটিং রুমের ব্যবস্থা, নার্সিং এর মান ও স্যানিটেশন সুবিধা না পাওয়ার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, যা এসব সেবাগুলি পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের গ্রহণ যোগ্যতাকে বাধা দেয়। পৌরসভার মহিলা উন্নয়ন কমিটি মহিলাদের জন্য উন্নত সেবা প্রদান নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে একটি মনোনীত স্থান তৈরি করার ধারণা নিয়ে আমার কাছে এসেছিল।” যোগ করেন পিএনও ফারুক।
এসব সমস্যা কিভাবে সমাধান করা যায় সেসব নিয়ে ভাবার পর, পিএনও ফারুক নারীদের জন্য সেবা বাড়াতে সাহায্য চেয়ে যোগাযোগ করেন প্রবৃদ্ধির সঙ্গে। ইতিবাচক অর্থনৈতিক পরিবর্তন এবং লিঙ্গ ক্ষমতায়নের জন্য সহযোগিতামূলক অঙ্গীকারের সঙ্গে, প্রবৃদ্ধি প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সাহায্য প্রদান করেছে পৌরসভা চত্বরে দুটি নিবেদিত ‘নারী কর্নার’ এবং মাতৃসদন স্থাপনের মধ্য দিয়ে।
এসব হস্তক্ষেপ একাধিক পর্যায়ে উন্মোচিত হবে। প্রথম পর্যায়ে, লিঙ্গ মূলধারার কৌশলের মধ্য দিয়ে পৌরসভার সেবা দেয়ার জন্য মহিলাদের গ্রহণ যোগ্যতা উন্নত করার উপর নজর দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের উদ্দেশ্য হচ্ছে, নারী উন্নয়ন কমিটির প্রত্যক্ষ ভূমিকার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন, জেন্ডার উপলব্ধি বৃদ্ধি করা।
তবে নারী কর্নার শুরু হওয়ার পর থেকে হানিমার মত অনেক মহিলা বেশ হাসিমুখেই পৌরসভায় আসেন। তিনি বলেন, আমি আমার শিশুর টিকা দেওয়ার জন্য মাতৃ সদন নারী কর্নারে যাই। এখন আমাদের পৌরসভা চত্বরে ও মাতৃসদনের জায়গায় ভিতরে বিদ্যুৎ, মনোরম টয়লেট এবং দুধপান করানোর আলাদা কক্ষ সহ আরামদায়ক বসার জায়গা রয়েছে। আগের মত আমাদের আর কষ্ট করতে হয়না, এসব সব কিছু আমাদের জন্য বেশ সহজ হয়ে গেছে।
পৌরসভায় মহিলাদের জন্য গ্রহণ যোগ্যতা বৃদ্ধি করতে এবং সেখানে যারা সেবা নিতে আসবে তাদের যেন ইতিবাচক অভিজ্ঞতা হয় সেদিকে নজর রাখার প্রতিশ্রুতি দেন মেয়র ইফতেখার হোসেন বেনো। তাদের সেবা বৃদ্ধি ও মহিলাদের ক্ষমতায়নের সম্ভাব্য পদক্ষেপ তুলে ধরেন। এদিকে তিনি কৃতজ্ঞ থাকেন প্রবৃদ্ধির প্রতি। এই ব্যাপারে বলেন, প্রবৃদ্ধির সঙ্গে অংশীদারিত্ব স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্থানীয় লোকেদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরির মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে। এই নারী কর্নার, ক্ষমতায়ন ও রূপান্তরমূলক পরিবর্তনের প্রতীক। ভৈরব এবং তার বাইরে এর সম্ভাব্য ইতিবাচক প্রভাবের ব্যাপারে ধারণা করা যায়।