বেনু আরা তার একজন শ্রমিকের তদারকি করছেন কারখানায়!

একটি হস্তশিল্পের কারখানার মালিক বেনু আরা, যিনি অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছেন সমগ্র যশোরের নিচু পর্যায়ের মহিলা কর্মীদের জন্য। পৌরসভার একেবারে প্রাণকেন্দ্রে অবস্থান করছে তার কারখানাটি, যেটা তার সারাজীবন পরিশ্রমের ফসল। এই ব্যাপারে বেনু আরা বলেন, আমি প্রায় ২৫ বছর ধরে হস্তশিল্পের কাজ করছি। স্থানীয় ও জাতীয় মেলার পাশাপাশি বিভিন্ন শো রুমে আমি সরবরাহ করি শাড়ি, নকশী কাথা, সালোয়ার-কামিজ, বিছানার চাদর, কাপড়ের টুকরো এবং ব্যাগের মতো পণ্য। 

নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বেনু আরও বলেন, তিনি সেলাই মোটিফ এর সঙ্গে কাজ করেছেন। বিশেষ করে যশোর সেলাই – একটি ঐতিহ্যবাহী হাত-সেলাই প্যাটার্ন। যদিও আপাতত এর মধ্যে একটা অসুবিধাও রয়েছে। সেটাও উল্লেখ করেন তিনি, এই নিয়ে বলেন, “যশোরে সেলাইয়ের বিশেষত্ব এর অনন্য প্যাটার্নের মধ্যে রয়েছে। যশোরের বেশির ভাগ কারিগর একই প্যাটার্ন ও মোটিফে কাজ করায় ক্রেতারা এই কাজের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন। তারা সেলাই প্যাটার্নে আরও নতুনত্ব চায়।

এই সমস্যা যখন চলছিল, ঠিক সেই সময় বেনু আরা প্রবৃদ্ধির ব্যাপারে জানতে পারেন। মূলত এই প্রকল্পটি ২০২১ সাল থেকে যশোরের হস্তশিল্প খাতকে সহায়তা করে আসছে,  যা হস্তশিল্প উদ্যোক্তা এবং প্রশিক্ষকদের ডিজাইন উদ্ভাবনে দক্ষতা বৃদ্ধি ও অনন্য যশোর সেলাইয়ের উপর সুনির্দিষ্ট নজর সহ পণ্য উন্নয়নের মতো উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসছে। তাদের দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টার অংশ হিসেবে, প্রবৃদ্ধি ২০২২ সালে বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট ফ্যাশন ডিজাইনারের সাহায্য নিয়ে ১২ দিনব্যাপী একটি নতুন কিছু উদ্ভাবন করার ওয়ার্কশপের আয়োজন করে। শুধু বেনু আরা একাই নন, সেখানে তার এলাকার আরও ৩০ জন স্বনামধন্য উদ্যোক্তারা প্রশিক্ষণে অংশ নেন এবং সেখানে তারা বিভিন্ন রকমের ডিজাইন ও রং মিশ্রনের কৌশল রপ্ত করেছিল। 

ওই প্রকল্পটি ২০২৩ সালে অংশগ্রহণকারীদের একই বিভাগের প্রশিক্ষকদের সঙ্গে প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের আরেকটি রাউন্ডের ব্যবস্থা করে, যাতে তারা তৃণমূল পর্যায়ে থাকা কারিগরদেরকেও প্রশিক্ষণ দিতে পারে। প্রতিবেদনের সময়কালে, ৩০ জন উদ্যোক্তা সফলভাবে মোট ৩ হাজার জন কারিগরকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এই প্রশিক্ষণের উদ্ভাবনী বিষয়বস্তু অন্যান্য স্থানীয় সংস্থাগুলিকেও অনুপ্রাণিত করেছে উন্নত পণ্যের ডিজাইন, রঙ-মিশ্রন সহ ইত্যাদি বিষয়ে অনুরূপ প্রশিক্ষণ কোর্স আরও সহজ করার লক্ষ্য ও ধারণা নিয়ে। প্রকল্পটি কারিগরদের সেলাই কৌশলের সমন্বয়ে একটি ম্যানুয়াল তৈরিতেও সহায়তা করেছে।

বানু বলেন, ‘’যশোরের সেলাই প্যাটার্নের সঙ্গে মানানসই রঙের সংমিশ্রণে নতুন ডিজাইন নিয়ে আসার ক্ষেত্রে এই প্রশিক্ষণগুলো আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। আমি ফ্যাব্রিকের উপর ভিত্তি করে পরিশোধিত রঙের সংমিশ্রণ সহ একটি নতুন ডিজাইন তৈরি করেছি। নতুন এই ডিজাইনটি ক্রেতাদের মধ্যে বেশ দারুন সাড়া জাগিয়েছে। শুধু ২০২৩ সালে যশোরের মধ্যে আমি মোট ৫০০ গজ কাপড় সরবরাহ করেছি। যেখানে প্রতিগজ কাপরের জন্য আমার খরচ হয়েছে ৪০০ টাকা এবং প্রতিগজ কাপড় বিক্রি করেছি ৬০০ টাকায়।’’

এই নতুন ডিজাইনের মাধ্যমে বানু আরা ২০২৩ সালে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬৭ টাকা অতিরিক্ত আয় করতে সক্ষম হয়েছেন। বেনু আরা সহ মোট ৩০ জন প্রশিক্ষণ গ্রহণ কারীরা ২০২৩ সালে নতুন সেলাই কৌশল প্রয়োগ করার মধ্য দিয়ে ৫০ লাখ টাকা অতিরিক্ত আয় করতে সক্ষম হয়েছেন। 

উপরন্তু, স্থানীয় অলাভজনক সংস্থাগুলির সাথে সমন্বয় এবং সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে হস্তশিল্প খাতের জন্য একটি ক্রস-পরাগায়ন কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল। এই কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য ছিল তাদের উদ্যোগের সমন্বয় এবং টেকসই বাস্তবায়ন করা। বিষয় টি আরও বড় পর্যায়ে প্রচলন করার জন্য জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অধীনে ম্যানুয়ালটি তালিকাভুক্ত করার প্রচেষ্টা চলছে। এটি সেলাই ও উদ্যোক্তাদের দক্ষতা ও কর্ম ক্ষমতা বাড়াতে আগ্রহী ব্যক্তিদের ব্যাপকভাবে উপকৃত করবে।

 

 

                             

How Does It Work? Play Video

Get Smart, Stay Connected

Your Municipality Digest Awaits!

Unlock the latest in local living—events, updates, and services, all in one sleek newsletter. Subscribe and transform how you engage with your community. Your next local insight is just an email away!

You have been successfully Subscribed! Ops! Something went wrong, please try again.

MUNICIPAL ASSOCIATION OF BANGLADESH