জেলা-উপজেলা পরিষদের মতো দেশের পৌরসভাগুলোতেও সংসদ সদস্যদের উপদেষ্টা করার উদ্যোগ নিতে বলেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। তবে মন্ত্রণালয় বলেছে, বিদ্যমান আইনে এ ধরনের সুযোগ নেই।
অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। পৌরসভার মেয়রদের সংগঠন মিউনিসিপ্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ম্যাব) সভাপতি ও নীলফামারী পৌরসভার মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ। সংসদ সদস্যদের পৌরসভার উপদেষ্টা করার উদ্যোগ, স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সামছুর রহমান।
প্রশ্ন :
পৌরসভাগুলোতেও সংসদ সদস্যদের উপদেষ্টা করার উদ্যোগ নিতে বলেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
কামাল আহমেদ: সংসদ সদস্যরা দেশের আইনপ্রণেতা। কিন্তু তাঁরা স্থানীয় সরকারের সব বিষয়ে কাজ করতে চান। ফলে স্থানীয় সরকার পর্যায়ে নানা সমস্যা হচ্ছে। সংসদ সদস্যদের পৌরসভার উপদেষ্টা করা যুক্তিসংগত হবে বলে মনে করি না। পৌরসভাগুলোতে সংসদ সদস্যদের উপদেষ্টা করার উদ্যোগের পেছনে কারও কারও ব্যক্তিস্বার্থ রয়েছে। কোথাও কোথাও স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে পৌরসভার মেয়রের সম্পর্ক ভালো নয়। সংসদ সদস্যরা মনে করছেন, উপদেষ্টা হতে পারলে মেয়রকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এটি হওয়া উচিত নয়। পৌরসভার সব কাজে সংসদ সদস্যদের পরামর্শ নেওয়া সম্ভব নয়। এতে জনসেবা বিঘ্নিত হতে পারে।
প্রশ্ন :
সংসদে বিরোধী দলের সদস্যরা প্রশ্ন তুলেছেন, সংসদ সদস্যদের জেলা-উপজেলা পরিষদের উপদেষ্টা করা সংবিধানের ৫৯ ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আপনার মতামত কী?
কামাল আহমেদ: সংবিধানের আলোকে সংসদ সদস্যদের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা না রাখাই ভালো। এতে কাজের গতি বাড়বে।
প্রশ্ন :
জেলা-উপজেলা পরিষদের ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের পরামর্শ গ্রহণ বাধ্যতামূলক। ফলে তাঁদের সুপারিশের বাইরে যেতে পারে না জেলা-উপজেলা পরিষদ। বিশেষজ্ঞরা স্থানীয় সরকারে সংসদ সদস্যদের ভূমিকা পুনর্বিবেচনা করার পরামর্শ দিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে সংসদ সদস্যদের পৌরসভার উপদেষ্টা করা হলে জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতা আরও খর্ব হবে বলে মনে করেন কি?
কামাল আহমেদ: ক্ষমতা কম-বেশি হওয়ার প্রশ্ন নয়। সবাই জনগণের সেবক। কিন্তু সংসদ সদস্যরা উপদেষ্টা হলে নাগরিক সুবিধা বাধাগ্রস্ত হবে। সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হবে
প্রশ্ন :
ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক গবেষণায় উঠে এসেছে, উপদেশ দেওয়ার মাধ্যমে সংসদ সদস্যরা সবকিছুতে হস্তক্ষেপ করেন। ইউপি থেকে উপজেলা—সব জায়গাতেই স্থানীয় প্রতিনিধিরা সংসদ সদস্যদের কাছে অসহায়। বর্তমানে পৌরসভার কর্মকাণ্ডে সংসদ সদস্যদের ভূমিকা কেমন?
কামাল আহমেদ: বর্তমানে পৌরসভার কর্মকাণ্ডে সংসদ সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা নেই। কারণ, জেলা-উপজেলা পরিষদের মতো পৌরসভাকে সংসদ সদস্যদের নির্দেশনা নিতে হয় না। তবে সংসদ সদস্যরাও জনগণের প্রতিনিধি। এলাকার উন্নয়নের যেকোনো বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
প্রশ্ন :
আগে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের পক্ষ থেকে সংসদ সদস্যদের উপদেষ্টা হওয়ার বিধান বাতিল করার দাবি জানানো হয়েছিল। স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার জন্য আইন সংশোধন করে সংসদ সদস্যদের উপদেষ্টা হওয়ার বিধান বাতিল করার দাবি তুলেছিলেন তাঁরা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মনে করেন কি?
কামাল আহমেদ: এ ব্যাপারে মন্তব্য করা সমীচীন হবে না। যাঁরা স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ আছেন, তাঁরা এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট মতামত দিতে পারেন। সরকারের উচ্চমহল এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
প্রশ্ন :
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলেছে, বিদ্যমান আইনে সংসদ সদস্যদের পৌরসভার উপদেষ্টা করার সুযোগ নেই। অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। আপনি কি মনে করেন, সরকার আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেবে?
কামাল আহমেদ: ২০০৯ সালে স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) বিলে পৌরসভায় সংসদ সদস্যদের উপদেষ্টা রাখার বিধান ছিল। বিলটিতে কিছু সংশোধনীর প্রস্তাব করে পৌরসভায় সংসদ সদস্যদের উপদেষ্টা না করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান গাজীপুর পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। সংশোধনী প্রস্তাবের পর পৌরসভায় সংসদ সদস্যদের উপদেষ্টা থাকার বিধান বাদ দিয়ে স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন-২০০৯ পাস হয়। সরকার ২০০৯ সালে সংসদ সদস্যদের পৌরসভার উপদেষ্টা করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। এখন আবার সংসদ সদস্যদের পৌরসভার উপদেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হবে না। সরকার নতুন করে এমন উদ্যোগ নেবে বলে মনে করি না।